তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার এবং সাইবার শিষ্টাচার

ধীরে ধীরে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সুলভ হওয়ায় এবং প্রাযুক্তিক উন্নয়নের ফলশ্রুতি তে সাইবার কালচারে বাংলা ভাষা বেশ পোক্তভাবে তার অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে। ফলে ব্যক্তিগত ব্লগ কিংবা কমিউনিটি ব্লগে বাংলায় ব্লগ লেখার সুযোগ অনেকটাই বেড়েছে। তাছাড়া ইউনিজয়, ফোনেটিক, প্রভাত ইত্যাদি কী-বোর্ড বিল্টইন থাকায়
বাংলা লেখাটা খুবই সহজ হয়েছে। ফলে বেড়েছে মানুষের মত প্রকাশের হার এবং মত প্রকাশের অবারিত সুযোগ।

ব্যক্তিগত ব্লগে যে কেউ তার নিজস্ব মতবাদ, চিন্তাধারা, নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারেন। হতে পারে তা সৌজন্য বহির্ভুত কিংবা উল্টোটাও। কমিউনিটি ব্লগে ব্লগারের ব্লগপোষ্টটি মডারেসনের সুযোগ ব্লগ কর্তৃপক্ষের হাতে থাকায় ব্লগ পোষ্টে কিংবা মন্তব্যে ছুরি-কাচি চালানো হয়। পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করে ব্লগ কমিউনিটির চিন্তাধারা বা মোটিভেসনের উপর। কোন কোন প্লাটফর্ম মুক্তিযুদ্ধ কে উচ্চকিত করে, কেউ আবার তথ্যপ্রযুক্তি, কেউ আবার বিনোদনকে।

ইদানিং একের পর এক কমিউনিটি ব্লগের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে ব্লগারের সংখ্যা। আমরা পাচ্ছি তথ্যসমৃদ্ধ দারুণ দারুণ লেখা। আবার কোন কোন ব্লগ কর্তৃপক্ষ বিষয় ভিত্তিক সেরা লেখার সংকলন ই-বুক হিসাবে প্রকাশ করছে। এর একটা ভালো দিক আছে। লেখাটি সহজে হারিয়ে যাচ্ছে না। আবার সংগ্রহের জন্যও সুবিধাজনক। সাধুবাদ এই উদ্যোগকে। পাশাপাশি ভালো উদ্যোগ, প্রচারণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কিছু ব্লগ। চিকিৎসার্থে তহবিল গঠনের মত প্রশংসনীয় উদ্যোগ রেখেছেন অনেকই।

তবে কিছুদিন ধরে আমি গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি এত প্রশংসনীয় ভালো উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু বিকৃতমনা ব্লগার অশালীন ভাষায় ব্লগার দের ব্লগ পোষ্টে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ উদ্দেশ্যমূলক ব্লগপোষ্টে যথেচ্ছ ভিন্নতম, ভিন্নধর্মাবলম্বীদের কে আক্রমন করছেন, চরিত্র হননের পাঁয়তারা করছেন। ক্রমাগত এই সব লোকেদের সংখ্যা বাড়ছে বলেই মনে হয়। প্রায় প্রতিটি কমিউনিটি ব্লগ প্লাটফর্মের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এই নোংরামির প্রতিযোগিতা। সামহোয়ারইনব্লগ বা সামু, আমার ব্লগ, চতুর্মাত্রিক, আমরা বন্ধু, ওপেস্ট ইত্যাদি সবারই চিত্র প্রায় একরকম।

সাইবার জগতে বাংলা ভাষার web presence এর প্রয়োজন আছে বটে, কিন্তু এই পারষ্পারিক বিদ্বেষ বা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো টা ঠিক? মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানেই কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা নয়। সাইবা যুগে একজন ব্লগারকে চেনার উপায় হলো তার নিকনেম বা ছদ্মনাম। কিন্তু এই ছদ্মনামের পিছনের ব্যক্তির মন মানসিকতার উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রতিফলন ঘটে তার লেখায়।

মনে রাখা দরকার যে সবকিছুরই সুফল এবং কুফল দুটোই আছে। প্রযুক্তিকে আপনি কিভাবে ব্যবহার করবেন তা আপনিই নির্ধারণ করবেন, কিন্তু ফলাফল সকলের জন্য স্বাভাবিক নাও হতে পারে। ধরা যাক কিচেন নাইফের কথা; এটাকে আমরা সাধারণতঃ রান্নাঘরে তরকারি কুটতেই ব্যবহার করি। ক্রোধোন্মত না হলে নিশ্চয়ই কেউ এটাকে মানুষ খুন করার মতো হাতিয়ার হিসাবে ভাববে না। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে কিংবা সাইবার জগতে তথ্য আদানপ্রদান নিমেষের ব্যাপার। তাই ভালো কিছু বা খারাপ কিছু সবই দ্রুতগতিতেই সম্পন্ন হয়। একটা সুলিখিত তথ্য নির্ভর ব্লগ যেমন জ্ঞানের উৎস হতে পারে তেমনি বিনোদনের ও মাধ্যম হতে পারে। আবার প্রোপাগান্ডা মানুষকে ভুল পথে চালিত করে উস্কে দিতে পারে অপরাধবিন্দুকে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান